হারলেই হোয়াইটওয়াশ। আগের দুই ম্যাচে মিলেছে টানা দুই পরাজয়। মানে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হার। এমন পরিস্থিতিতে কঠিন চাপে বাংলাদেশ দল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাই যেকোনো মূল্যে একটি জয়ের ভীষণ প্রয়োজন। তার ওপর চোখ রাঙাচ্ছে দলের সেরা দুই ক্রিকেটারের ইনজুরি। তবুও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা শেষ ম্যাচে ভালো কিছুর আশায়। দেখছেন জয়ের স্বপ্নও। অতীত স্মৃতিকে অনুপ্রেরণা করে ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভালে মাঠে নামার আগে টাইগার অধিনায়ক শুনিয়েছেন আশার কথাও। তিনি বলেন, ‘গত বছর আয়ারল্যান্ডে আমরা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলাম।
আমরা কিন্তু ম্যাচটা জিতেছি। আবার আয়ারল্যান্ড থেকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে গিয়েও আমরা নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছিলাম। অনুভূতিটা অসাধারণ ছিল। আমরা আবারো এটাই করতে চাই। কিন্তু সব সময়ই যেটি বলি, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডকে হারানোটা সব সময়ই কঠিন। তবে ভালো লাগছে যে উইকেট কিন্তু বেশ ভালো। আশা করছি, কাল আমরা এখানে ভালো খেলবো।’ এই ওয়ানডে সিরিজই ছিল মাশরাফিদের জন্য বিশ্বকাপ প্রস্তুতির শুরু। কিন্তু মাত্র ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপের আর মাত্র ১০০ দিন আগে হয়তো নতুন ভাবেই ভাবতে হচ্ছে মাশরাফিকে।
বাংলাদেশ অধিনায়কের শেষটা ভালো করার যে বিশ্বাস তার কারণও আছে। ডানেডিনের উইকেটই দিচ্ছে তাকে বাড়তি অনুপ্রেরণা। এই মাঠে শেষ ম্যাচে দুই ওপেনারকে শূন্য রানে হারিয়েও নিউজিল্যান্ড জিতেছিল ৫ উইকেটে, টপকে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের ছুড়ে দেয়া ৩৩৫ রান। বলার অপেক্ষা রাখে না- রান স্বর্গের উইকেট আত্মবিশ্বাসী করছে মাশরাফিকে। কারণ আগের দুই ম্যাচে হারের কারণ ছিল ব্যাটিং বিপর্যয়। তাই এই ম্যাচে বড় স্কোর করতে পারলে লড়াইয়েরও পুঁজি পাবে টাইগার বোলাররা। মাশরাফি বলেন, ‘যতটা জানি, উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো। আমরা এখানে আগে টেস্ট খেলেছি, সেখানেও বেশ ভালো ব্যাট করেছিলাম। এখানে শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ড খেলেছিল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে ৩৩৫ রান তাড়ায় নিউজিল্যান্ড জিতে গিয়েছিল। এবারও উইকেট ভালো হবে বলেই মনে হচ্ছে। আশা করি আমরা সেটি বুঝতে পারবো এবং ভালো কিছু করতে পারবো।’ তবে উইকেট ভালো ছিল নেপিয়ারের প্রথম ওয়ানডেতেও। কিন্তু দলের ব্যাটসম্যানরাই দিয়েছে আত্মাহুতি। বিশেষ করে দুই ম্যাচেই সিনিয়র কোনো ব্যাটসম্যান নিতে পারেনি দায়িত্ব। এ নিয়ে টাইগার অধিনায়ক বলেন, ‘নেপিয়ারেও ভালো উইকেট ছিল। হয়তো আমাদের মানিয়ে নিতে সময় লাগছে। তবে ২-০তে পিছিয়ে থাকার পর এসব অজুহাতের মতো মনে হতে পারে। আশা করি শেষ ম্যাচে ভালো কিছু হবে, টপঅর্ডার ভালো কিছু করবে।’
নিউজিল্যান্ড সফরে যাওয়ার আগে টানা এক মাস বিপিএলে ব্যস্ত ছিল জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। এরপর সেখানে গিয়ে বৈরী কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে যে পর্যাপ্ত সময় পাওয়ার কথা ছিল সেটিও মেলেনি। যে কারণে ব্যাটসম্যান ও বোলারদের যুদ্ধ করতেই দেখা গেছে কন্ডিশনের সঙ্গে। তবে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন ছিলেন ব্যতিক্রম। দলকে অনেকটাই একাই টেনেছেন। দুই ওয়ানডেতেই হাঁকিয়েছেন ফিফটি। কিন্তু শেষ ম্যাচে তাকে পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই ইনজুরির কারণে। আর সাকিব তো আগেই ছিটকে পড়েছেন ওয়ানডে দল থেকে। তবে এসব কিছুই নিয়ে প্রস্তুতি অধিনায়ক। আক্ষেপ শুধু একজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান না থাকার। তিনি বলেন, ‘দলে অতিরিক্ত একজন ব্যাটসম্যান থাকলে ভালো হতো। সাকিবকে ধরলে কিন্তু অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান ছিল। মিঠুন ছিল, সাব্বির ছিল। সাকিবের চোটের পর অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান আনা হয়নি। দ্বিধায় ছিলাম একজন বাঁহাতি স্পিনার আনা হবে কিনা, সে শেষ মুহূর্তে চোটে পড়ায় বদলি আনা সম্ভব হয়নি। ১৪ জনের স্কোয়াড নিয়েই আছি।’
২০১৯ বিশ্বকাপের দল ঘোষণার আগে এটিই বাংলাদেশের শেষ ওয়ানডে ম্যাচ। বিশ্বকাপের আগে মে মাসের শুরুতে আয়ারল্যান্ডে একটি ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে খেলবে দল, তবে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করতে হবে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই। তাই শেষ ম্যাচেটা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যদিও সেই দলের আসল চেহারাটা এখানে পাওয়া মুশকিল। তবে যারা আজ খেলবেন তাদের অনেকেরই সুযোগ থাকবে বিশ্বকাপ দলে। সেই হিসেবে তাদের পারফরম্যান্স দেখে নেয়ার একটি বড় সুযোগ। এ নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘এই সিরিজে আমরা যেভাবে খেলতে চেয়েছিলাম। সেটি খেলতে পারিনি। অনেক পরিকল্পনাই আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এর মানে এই না যে, সামনে এগোনোর সুযোগ নেই। এই সফরে অনেক দুর্বল দিকগুলো বেরিয়ে এসেছে। বিশ্বকাপের ১০০ দিন বাকি আছে। এই দুর্বল দিকগুলো নিয়ে তো কাজ করার অনেক সুযোগ থাকছে।